
প্রকাশিত: Sun, Mar 19, 2023 4:34 PM আপডেট: Thu, Jun 26, 2025 3:25 AM
বাবা হুমায়ূন আহমেদকে লেখা ছেলে নুহাশের আবেঘন চিঠি
বাবা, : আশা করি তুমি এখন ভালো বোধ করছো। অবশ্য আমার নিজের শরীরও খুব একটা ভালো নেই। আমার নাকি টাইফয়েড হয়েছে। অসুখটা আমার পাকস্থলীকেও দুর্বল করে ফেলেছে। পুরো এক সপ্তাহ ধরে চালের তৈরি বিরক্তিকর একটা খাবার ছাড়া আমাকে আসলে কিছুই খেতে দেওয়া হয়নি। আমার ধারণা, এটিই ‘জাউভাত’। অসুস্থতার এই পুরোটা সময় বিছানায় শুয়ে থেকেছি আর বাধ্য হয়েছি জাউভাত গিলতে। পুরোটা সময় পার করেছি আমার পছন্দের ভালো ভালো খাবারের কথা কল্পনা করে। ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ আমার গলদা চিংড়ির কথা মনে পড়ল। গলদা চিংড়ির কথা মনে পড়ে যাওয়ায় মনে পড়ে গেলো অনেক কিছুই বিশেষ কিছু। মা ও তোমার মধ্যে সবে ডিভোর্স হয়েছে। এ সময়ের পুরো পরিস্থিতিই আমার জন্য অনেক কঠিন। প্রতিটি মুহূর্ত আমার কেটেছে এই কামনা করে, খুব শিগগিরই সবকিছু আগের মতো হয়ে যাবে। তুমি আবার আগের মতোই আমাদের মাঝে ফিরে আসবে। কিন্তু যখন সত্যি সত্যি ডিভোর্স হয়ে গেলো, তখনই অনুভব করলাম নির্মম সত্যটা। বুঝতে পারলাম, ফিরে আসার দরজাটা এবার চিরকালের জন্যই বন্ধ হয়ে গেলো।
কেমিস্ট্রির ভাষায় যাকে আমরা বলি দহন। যখন পুড়ে গেলে বস্তু আর কখনোই আগের রূপে ফিরতে পারে না, এমন কিছু। তবে আমি সবচেয়ে ভয় পেয়েছিলাম অন্য একটা ব্যাপারে আশঙ্কা ছিল, এর পরিণতিতে তুমি হয়তো আমার থেকে দূরে সরে যাবে। আগের দৃষ্টিতে তুমি আমাকে দেখবে নাÑএ ভাবনাও আমাকে তাড়িত করতো প্রতিটি মুহূর্ত। ডিভোর্সের পর দিনকয় কেটে গেছে। এ সময়ই একদিন হঠাৎ তুমি আমাকে ডাকলে। বললে, একটু আগেই বাজার থেকে ফিরেছো তুমি। সঙ্গে এনেছো বিশাল সাইজের গলদা চিংড়ি। তোমার ইচ্ছা করছে এগুলো আমাকে রান্না করে খাওয়াতে। তোমার ইচ্ছা আমরা দু’জনে মিলে যেন তোমার বাড়িতে বসে এগুলো খাই। কিন্তু এটা যে তখন সম্ভব ছিল না, তুমি-আমি দু’জনেই তা জানতাম। আসলে ওই রকম পরিস্থিতিতে এসবের কথা কল্পনাতেই আসে না।
তবে ঘটনা সেখানেই থেমে থাকেনি। আধা ঘণ্টা পর ইন্টারকমের রিং বেজে উঠল। দারোয়ান জানাল, বাবা দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন। তার হাতে জীবন্ত গলদা চিংড়ি। আনন্দিত, উত্তেজিত আর হতবিহ্বল আমি একছুটে নীচে নেমে গেলাম। আমার বিশ্বাসই হচ্ছিল না, গলদা চিংড়ি হাতে বাবা সত্যি সত্যি দরজা পর্যন্ত এসে পড়বে। তুমি আমাকে বললে, ‘সত্যিই চেয়েছিলাম দু’জনে মিলে এগুলো খাব। কিন্তু এ মুহূর্তে তো আসলেই সম্ভব নয়। তবে আমি কথা দিচ্ছি, পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন, যাই ঘটুক না কেন, আমি তোমার চারপাশেই থাকবো। এমন একদিন আসবেই, যেদিন আমরা আবারও আগের মতোই একসঙ্গে গলদা চিংড়ি খাবো। কিন্তু এখন তুমিই এগুলো খাও, এটাই আমি চাই। এরপর তুমি আমার হাতে সেই বিশাল সাইজের জীবন্ত গলদা চিংড়িগুলো তুলে দিলে। কিন্তু ছোট ছোট চোখ আর লম্বা লম্বা পায়ের অদ্ভুত প্রাণীগুলো ঠিক সে মুহূর্তেই আমার কাছে অন্য অর্থ নিয়ে ধরা দিলো। প্রাণীগুলো আমার চোখে ধরা দিলো আশার প্রতীক হিসেবে। আমি বুঝলাম, বাবা, তুমি আমার জন্য আগের মতোই আছো এবং আগের মতোই থাকবে যেমনটা তুমি সব সময় ছিলে আমার জন্য।
তোমার পাশে যেটুকু সময় আমার থাকা উচিত ছিল, তা থাকতে পেরেছি বলে মনে করি না আমি। যখন ফোন করে তোমার সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছি, তখন তুমি আর কথা বলার অবস্থায় ছিলে না। তারপরও যখনই আমি তোমার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়েছি, এত বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছি যে নিজের মনের কথা ঠিকঠাক গুছিয়ে বলতে পারিনি। অবশ্য কখনোই তোমার মতো কথার কারিগর ছিলাম না আমি। অপারেশনের আগে তুমি যখন ঢাকায় ফিরলে, তখন তোমাকে দেখা আমার জন্য ছিল সত্যিই বেদনাদায়ক। তোমাকে দেখতে যেতে তোমার বাড়ির দরোজায় প্রত্যেকবার আমাকে থামানো হতো, এটাও আমাকে বেদনা দিত। সন্তান তার বাবার সঙ্গে দেখা করতে চায়, এ কথা দারোয়ানকে প্রত্যেকবার বলা সব সন্তানের জন্যই তো বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা। তবে এগুলো আসলে কোনো অজুহাতই নয়, তোমার প্রতি আমার কর্তব্যভার এসব অজুহাতে আসলে লাঘব হয় না। আমার উচিত ছিল আরও অনেক বেশি সময় তোমার পাশে থাকা। বাবা, আমি চাই সবকিছু বদলে দিতে।
আমি তোমাকে জানাতে চাই, আমার অস্তিত্বে তোমাকে অনুভব করি প্রবলভাবে। তোমার পাশে আরও অনেক সময় ধরে থাকতে চাই আমি। তোমাকে আরও বোঝাতে চাই, আমার ইচ্ছেমতো তোমার পাশে থাকতে পারছি না এ অক্ষমতা আমাকে অহর্নিশ দহন করে। এই চিঠিটাই তোমাকে আমার দেওয়া গলদা চিংড়ি। Ñতোমার ছেলে, নুহাশ। সূত্র : হিমু অনলাইন পেজ।
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
